জীবিকার টানে এখন বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার লোক যায় বিদেশে। এখন নারীরাও পাড়ি জমাচ্ছে বিদেশে। আর তার বেশি সংখ্যকই পাওয়া যাবে মধ্য প্রাচ্যে।
সৌদি আরবেও অসংখ্য বাংলাদেশি প্রবাসির দেখা মেলে। সেখানে তারা এমনও কিছু কাজ করতে হয় যা তাদের জীবনেরও ঝুকি থাকে। আবার অনেক সময় বিপদের মধ্যেও কাওকে কাছেও পাওয়া যায় না সেখানে।
সৌদি আরবে নির্যাতনের শিকার ও জেল খেটে বাংলাদেশি নারীদের দেশে ফেরা অব্যাহত রয়েছে। রোববার (২ জুন) দিনগত রাতেও হতাশার চেহারা ও গরম লোহার চ্যাকাসহ নানা ধরনের জখমের চিহ্ন নিয়ে দেশে ফিরেছেন ৩০ জন বাংলাদেশি নারী। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের হেল্প ডেস্ক থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
ফিরে আসা নারীরা বিমানবন্দরে নেমে শুকরিয়া আদায় করেন। তারা বলেন, মনে হচ্ছে দোযখ থেকে মুক্তি পেলাম। দেশে সম্মান নিয়ে বাঁচতে চাই। সৌদি থেকে আসা কুমিল্লার শেলী বলেন, ‘তিন মাস আগে দালাল মইনের মিষ্টি কথা শুনে সৌদি যাই। এটাই ছিল জীবনেন বড় ভুল। সৌদি অত্যাচারী মালিকের কথা সব বলতে পারব না। শুধু এতটুকুন বলব, সে মানুষ নামে জানোয়ার।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাসার কাজের কথা বলে নিলেও তাদের মতলব ছিল ভিন্ন। খারাপ কাজের প্রস্তাব দিলে আমি পালিয়ে দূতাবাসে গিয়ে আশ্রয় নেই। সেখান থেকে নিয়ম অনুযায়ী জেলখানা হয়ে দেশে আসি।’
নওগাঁর আঞ্জুমারা বলেন, ‘বাজে প্রস্তাবে সাড়া দেই নাই বলে গরম আয়রন পিঠে লাগানো ছাড়াও অসংখ্য বার মারধর করেছে।’
এদিকে গত এক মাসে সৌদির জেলখানার মহিলা সেল থেকে দুই শতাধিক বাংলাদেশি নারী কর্মী দেশে ফিরে এসেছেন। আজ দেশে আসা এ ৩০ জনকে ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের আবেদনের প্রেক্ষিতে ফিরিয়ে আনা হয়।
এয়ার এরাবিয়ার একটি ফ্লাইটে তারা হযরত শাহজালাল অান্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রাত ৯টায় দিকে অবতরণ করেন। অমানবিক নির্যাতন সইতে না পেরে ইমিগ্রেশন ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়। পরে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড ও বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের সহায়তায় তাদের দেশে ফিরিয়ে আনা হয়।
জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) দেওয়া তথ্য মতে, ২০১৭ সালে অভিবাসী নারীর সংখ্যা ছিল ১২ লাখ ১৯ হাজার ৯২৫ জন, যা মোট অভিবাসন সংখ্যার ১৩ শতাংশ। ১৯৯১ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত একা অভিবাসন প্রত্যাশী নারী শ্রমিককে অভিবাসনে বাধা দেওয়া হলেও পরবর্তীতে ২০০৩ এবং ২০০৬ সালে কিছুটা শিথিল করা হয়।
এছাড়া ২০০৪ সালের পর থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত নারী শ্রমিকের অভিবাসন হার ক্রমাগত বাড়তে থাকে। ২০১৫ সালে এ সংখ্যা দাঁড়ায় মোট অভিবাসনের ১৯ শতাংশে।